শনিবার , ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইটি বিশ্ব
  3. আজকের পত্রিকা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ও জীবন
  6. একদিন প্রতিদিন
  7. কোভিড-১৯
  8. খেলা
  9. চাকরি
  10. চিত্র বিচিত্র
  11. জনপ্রিয় সংবাদ
  12. জাতীয়
  13. ডাক্তার আছেন
  14. দরকারি
  15. দৃষ্টিপাত

বিএনপির কাউন্সিলে টাকার বিনিময়ে ভোট কিনে সভাপতি হচ্ছে আওয়ামী আস্থাভাজন আলী আহমদ

প্রতিবেদক
ekhonsongbad
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫ ২:৩২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিরাই, সুনামগঞ্জ:

আগামীকাল রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাড়ল ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল নির্বাচন। এই কাউন্সিলে নির্বাচিত হবেন নতুন সভাপতি, যিনি আগামী দুই বছর তৃণমূল বিএনপিকে নেতৃত্ব দেবেন। তবে এই নির্বাচন ঘিরে ইউনিয়নজুড়ে ছড়িয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও অসন্তোষ।
সভাপতি পদে একমাত্র প্রার্থী আলী আহমদ। যদিও তিনি দলের লোক বলে দাবি করছেন, স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য ভিন্ন। অভিযোগ উঠেছে—আলী আহমদ আদতে আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন এবং তার প্রার্থিতা বাস্তবায়নে সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী ঘরানার একটি ‘ম্যাকানিজম’।
আলী আহমদ বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অংশ নিয়েছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে, যেখানে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ নেয়নি। তিনি সেই নির্বাচনে জয়লাভও করেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে-একজন আদর্শভ্রষ্ট চেয়ারম্যান কীভাবে দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন?
স্থানীয় সূত্র ও বিএনপির তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, এই নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী মহল। রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকার ব্যবহার। অভিযোগ অনুযায়ী, কালো টাকা ব্যবহার করে ভোট কেনা হচ্ছে—প্রতিনিয়ত তৃণমূল কর্মীদের কাছে টাকার প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের নামে তৈরি হচ্ছে ‘কালো অধ্যায়’।
বিশেষ করে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা নাছির চৌধুরীর ভূমিকা নিয়ে। নেতাকর্মীদের মতে, আলী আহমদ তার চোখে ধুলো দিয়ে অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই প্রার্থিতা আদায় করে নিয়েছেন। দলের আদর্শ, ত্যাগ, সাংগঠনিক দিক—সবকিছু পেছনে ফেলে এখন যেন টাকাই হয়ে উঠেছে যোগ্যতার মাপকাঠি।


একজন ত্যাগী কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দলের আদর্শ আজ টাকা আর ষড়যন্ত্রের কাছে হেরে যাচ্ছে। আমরা জানি কে আসল বিএনপি, কে ভাড়া করা মুখোশ।”
আলী আহমদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সন্দেহ। স্থানীয় সূত্র জানায়, তিনি মূলত আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাকে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট, দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় এবং প্রয়াত সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আস্থাভাজন হিসেবে গণ্য করা হয়।
বিএনপি নেতারা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে আলী আহমদকে সভাপতি নির্বাচিত করা হলে ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি আরও দুর্বল হতে পারে এবং দলের প্রতি জনগণের আস্থাও কমে যেতে পারে।


আলী আহমদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। গত ৮ জুলাই রাত আড়াইটার দিকে সিলেট শহরের সুবিদবাজারের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৭ সালের জারুলিয়া জলমহাল সংঘর্ষ এবং ২০২১ সালের ভাটিপাড়া জলমহাল ইস্যু।
প্রদীপ রায়ের রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনের ওপর দখল এবং বিতর্কিত ভূমিকার কথা স্থানীয়রা জানালেও, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছিলেন ক্ষমতার শীর্ষে। এমন এক নেতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আলী আহমদের দলীয় গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
তাড়ল ইউনিয়নের বিভিন্ন বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিল নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। একদিকে কেন্দ্রীয় দিকনির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতা—সব মিলিয়ে আলী আহমদকে সভাপতি হিসেবে মানতে পারছেন না অনেকেই।


তাড়ল ইউনিয়ন বিএনপির আগামীকালকের কাউন্সিল শুধু একজন সভাপতির নির্বাচন নয়—এটি মূলত দলের নীতিগত অবস্থান, আদর্শের প্রতি অঙ্গীকার এবং নেতৃত্বের প্রতি আস্থারও পরীক্ষা। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এখন দেখছে, আদর্শ নাকি সুবিধাবাদ—কোন পথে হাঁটবে তাদের সংগঠন।

সর্বশেষ - জাতীয়