রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত জামিল চৌধুরী ইউনুস সরকারের প্রশাসনে পুনর্বাসিত হতে মরিয়া। অথচ তিনি একসময় স্বৈরাচারী সরকারের ঘনিষ্ঠ দোসর ছিলেন। এবার তাকে পুনর্বাসন করতে হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আখতারুজ্জামান দিরাইয়ে এক বিশেষ ‘হাওর উৎসব’ আয়োজন করেছেন, যা আগামী ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
তবে, স্থানীয় জনগণের চাপে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে উৎসবটি বাতিল করা হয়েছে। স্থানীয়রা এই আয়োজনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এলাকাবাসীর মতে, এমন একটি উৎসবে জামিল চৌধুরীর উপস্থিতি পুরো উদ্যোগটিকেই কলঙ্কিত করেছে।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর আত্মগোপনে থাকা জামিল চৌধুরীকে হঠাৎ করেই প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন অতিরিক্ত সচিব আখতারুজ্জামান। এই উৎসবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের এবং হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান-এর।
প্রথমে দিরাই উপজেলার তাড়ল গ্রামের মাঠে এই উৎসবের আয়োজন করা হলেও, এলাকাবাসীর প্রতিবাদে সেটি কয়েক কিলোমিটার দূরের উজানধল মাঠে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তাতেও জনসাধারণের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি।
জানা গেছে, বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জামিল চৌধুরীর দমননীতির শিকার হয়েছেন। ২০১৪ সালে বিএনপির একটি কর্মসূচি চলাকালে তিনি দুই শীর্ষ নেতাকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। এমনকি নিজের স্বজনদের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন।
এছাড়াও, বিভিন্ন সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার অবস্থান বদলান এবং প্রভাবশালী আমলাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এই কৌশলের মাধ্যমে তিনি বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জামিল চৌধুরী সরকারি সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তার পুত্র কায়েস চৌধুরীও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, জামিল চৌধুরীর পুনর্বাসন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার অন্ধ সমর্থন এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তৎপরতার কারণে তিনি বারবার ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তদন্ত হওয়া উচিত বলে এলাকাবাসীর দাবি।
হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান বলেছেন, জামিল চৌধুরী সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ছিল না। ভবিষ্যতে তাকে কোনো সরকারি কর্মসূচিতে রাখা হবে না। সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদও বলেছেন, তারা বিষয়টি সম্পর্কে আরও সচেতন হবেন।
তবে, সাধারণ জনগণ মনে করছে, বিষয়টি শুধু সচেতনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না—অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।