সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইটি বিশ্ব
  3. আজকের পত্রিকা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ও জীবন
  6. একদিন প্রতিদিন
  7. কোভিড-১৯
  8. খেলা
  9. চাকরি
  10. চিত্র বিচিত্র
  11. জনপ্রিয় সংবাদ
  12. জাতীয়
  13. ডাক্তার আছেন
  14. দরকারি
  15. দৃষ্টিপাত

স্যামন’ ও সালমনের বিড়ম্বনা..

প্রতিবেদক
newsupload
নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

তাইসির মাহমুদ :
মাছ কিনবো । বেথনাল গ্রীনের একটি গ্রোসারী শপে ঢুকলাম । সম্ভবত দোকানটির মালিক আফগানী। চল্লিশ উর্ধ যুবক কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছেন । জানতে চাইলাম, “ডু ইউ সেইল স্যামন ফিশ”?
তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে আমার মুখের পানে হা করে তাকিয়ে থাকলেন । ভাবলাম, বোধহয় আমার কথা শুনতে পারেননি। তাই সুর কিছুটা বুলন্দ করে আবার বললাম, ডু ইউ সেইল স্যামন? তিনি এবারও যেন আমার কথাটা ঠাহর করতে পারলেন না ।
তাহলে দোকানী কি মাছটির নাম আগে শুনেননি? খানিকটা খটকা লাগলো। ভুলটা কোথায়? এবার প্রশ্নটা করলাম এভাবে- “ডু ইউ সেইল সালমন (Salmon) ফিশ”? অর্থাৎ ‘স্যামন’-এর স্থলে আমি ‘সালমন’ বললাম।
এবার যেন দোকানির জবান ফুটলো। অহ, ইয়েস ইয়েস, উই সেইল..। সাথে সাথে তিনি দোকানের একটি সেলফের দিকে আমাকে ইশারা করলেন- ‘দিজ ইস ফ্রোজেন স্যামন ফিশ’।
আমার প্রশ্নের ধরন দেখে পেছনে দাঁড়ানো জিবরিল মিটমিটে হাসছে। ও সঙ্গেই ছিলো। আমিও তার দিকে চেয়ে হাসলাম । স্যামন মাছের মুল্য চুকিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে আসছি। জিবরিল বললো, আব্বু দ্যা ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড ‘স্যামন’ বাট আন্ডাস্ট্যান্ড ‘সালমন ‘। বললাম, করার কিছু নেই। তোমার বয়সে আমিও সালমনই বলতাম।
সমস্যা হলো, স্যামন ফিশকে অনেকেই সালমন ফিশ বলে থাকেন। কারণ ইংরেজিতে নামটি সালমন । অনেকেই জানেননা ‘এল’ অক্ষরটা সাইলেন্ট। মানে ‘এল’ অনুচ্চারিত থাকে। এই ভুলগুলো ক্লাসে ঠিক করে না নিলে ভুল হতেই থাকে।
আমার এখনও মনে আছে, স্যামন যে সালমন নয়- সেটা শিখেছিলাম ক্লান নাইনে । ব্রিটিশ লেখক উইলিয়াম সামারসেট মম-এর লেখা ‘দ্যা লাঞ্চন” গল্পটি আমাদের ইংরেজি পাঠ্য বইয়ে ছিলো । খালিক স্যারের ইংরেজি পড়ানোর স্টাইল ছিলো খানিকটা ভিন্ন । প্যারা প্যারা করে আমাদের প্রথমে ‘রিডিং’ পড়তে হতো । এরপর স্যার বাংলা অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিতেন । তো ‘রিডিং’ পড়ার সময় উচ্চারণে ভুল হলে স্যার সেটি শুদ্ধ করে দিতেন।
একদিন ইংরেজির ক্লাসে এক সহপাঠি রিডিং পড়ার সময় সালমন উচ্চারণ করেছিলো। স্যার তাকে থামিয়ে দিয়ে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করলেন । বললেন, ‘এল’ অক্ষরটি এখানে সাইলেন্ট । যেমন আইসল্যান্ড (Island) শব্দে ‘এল’ সাইলেন্ট থাকে। হয় আইল্যান্ড। যেমন গ্রীনউইচ (greenwich) হয়না, গ্রীনিচ হয় । এখানে ‘ডাব্লিউ’ সাইল্যান্ট। আরো বিভিন্ন শব্দের প্রকৃত উচ্চারণ সেদিন শিখিয়েছিলেন ।
স্যারের ইংলিশ জ্ঞান ছিলো খুবই প্রখর । ইংরেজি টেন্স-এর বারোটি ফর্ম মুখস্থ করতে গিয়ে নিলডাউন হতে হতো বারবার। খালিক স্যার আজীবন আমার মনের গহীনে শ্রদ্ধার আসন পেতে আছেন । তিনি গত হয়েছেন অনেক আগেই । দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে জান্নাতে সমাসীন করেন।
আসলে, ছাত্রজীবনে ভালো স্যার পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। আজকাল অনেক শিক্ষক নিজেই জানেননা কোথায় ‘এল’ সাইল্যান্ট থাকে আর কোথায় উচ্চারণ করতে হয়। শিক্ষক যদি না জানেন, তাহলে শিক্ষার্থী জানবে কীভাবে?
তবে সাইল্যান্ট অক্ষরগুলো কারো কাছ থেকে শিখতে হয় । বিশেষ করে যদি প্রোপার-নাউন হয়। যেমন লন্ডনে একটি বরার নাম ‘সাদার্ক কাউন্সিল’ । আমিতো এদেশে আসার পর প্রথমদিকে সাউথওয়ার্ক (southwark) কাউন্সিলই বললাম । আর সাদার্ক ব্রীজকে বলতাম সাউথওয়ার্ক ব্রিজ। অবশ্য, বাংলাদেশীদের অধিকাংশই সাদার্ককে সাউথওয়ার্ক বলতেই শুনি।
লন্ডনের প্রথম দিকটার সময়ে, একদিন আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনে এক শ্বেতাঙ্গ বৃটিশের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, সাউথওয়ার্ক ব্রীজটি কোন দিকে । তিনি আমার কথাটি প্রথমে বুঝে ওঠতে পারেননি। যখন লিখে দেখালাম, তখন বললেন “ওহ, সাদার্ক ব্রীজ? বললাম ইয়েস ইয়েস।
লন্ডনে কোনো অনুষ্ঠানে যখন এক টবিলে বসে অনেকে খাবার খাই। আর ওই টেবিলে স্যামন ফিশ দিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয়, তখন অনেককেই এভাবে বলতে শুনি- “আমাকে সালমনের বাটিটা এগিয়ে দিন” । তখনই আমার খালিক স্যারের কথা মনে পড়ে। তিনি ক্লাসে শুধরিয়ে দিয়েছিলেন, “সালমন নয়, স্যামন” ।
আসলে কিছু কিছু শিক্ষা একাডেমিক। ক্লাসে শিখতে হয়। বই পড়ে শিখলে মাঝে মধ্যে বিড়ম্বনায় পড়ার আশংকা থেকেই যায়।
যাক, ‘স্যামন’ আমার খুবই প্রিয় একটি মাছ। সামুদ্রিক মাছ । কাটাবিহীন, সুস্বাদু। ক্লাসে যখন স্যামন মাছের কথা পড়ি তখন বেশ কৌতুহল জাগে । লন্ডন এসে মাছটি অনেক খেয়েছি। এখনও খাই। খেতে মন চায় । মাছটি যেমন সুস্বাদু, তেমনী পুষ্টির উপাদানেও ভরপুর। আসুন, রেডমিট ত্যাগ করি । বেশি করে মাছ খাই । স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করি।
তাইসির মাহমুদ
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ - জনপ্রিয় সংবাদ